আমরা শূন্যে অবস্থান শব্দটি অনেক আগে থেকে জেনে এসেছি । কিন্তু আমরা সাধারনত ধনাত্বক বলতে ভালোকে বুঝি ও ঋনাত্বক বলতে খারাপকে বুঝি । কিন্তু শূন্যেকে না ধনাত্বক বলা যায় বা না ঋনাত্বক বলা যায় । তবে কখনো এটাকে অধনাত্বক ও অঋনাত্বক বলা যায় ।
হাসু নামের একটি ছেলে যার চরিত্রকে গানিতীক ভাষায় কি সংজ্ঞায়িত করবো আমার জানা নাই ।
হাসুর জন্ম নব্বই দশকের শেষের দিকে , মধ্যবিত্ত কোন পরিবারে । ছোটবেলা থেকেই সহজ সরলভাবে বড় হয়ে ওঠা । তবে এ শিক্ষাটা তার মা বাবা থেকেই প্রাপ্ত , তবে এ খারাপ প্রভাবটা তাদের উপর ও কম যায় নি। হাসুর বয়স মাত্র পাঁচ বছর । প্রতিনিয়ত বিকাল বেলা খেলতে যায় হাসু, ঠিক তেমনি সবাই মিলে গোল্লাছুট খেলছে । গোল্লাছুট খেলার একটা নিয়ম আছে , কিছু খেলার সাথীরা চারদিক থেকে ঘিরে রাখে , প্রতিপক্ষরা নির্দিষ্ট একটি জায়গা বা গর্তকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে ও প্রতিপক্ষকে দৌড়ের ফাঁকে এড়িয়ে চলে যায় । প্রতিপক্ষের স্পর্শ এড়িয়ে চলে গেলে গোল হয় । হাসু এ নিয়মে খেলছে সবার চেয়ে ছোট সে , প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে এক এক করে সবাই চলে গেল , এবার হাসুর পালা । হাসু ও কোনভাবে অন্যপক্ষের কোন খেলোয়ারকে পাঁচবার স্পর্শ করে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে দিল দৌড় , কিন্তু কেউ তাকে স্পর্শ করল , যা নিজে ছাড়া অন্যকেউ জানে না । সবাই গোল মেনে নিল , কিন্তু হাসু মানতে নারাজ । সে সবার মাঝে এসে বলল “গোল হয় নি , সে আমাকে ছুয়েছে। তো এতে স্বপক্ষের সবাই তাকে বাদ না দিয়ে , পুরো খেলাই বাদ দিয়ে দিল । বেচারা হাসুর পক্ষে , কিংবা বিপক্ষে জায়গা আর হলো না । এভাবে থাকায় কোন সময় দলে জায়গা হত, আবার হতও না । হাসুর যখন বয়স আট বছর , তার ছোট বোনের বয়স তখন মাত্র তিন বছর । সবাই বাল্যকালে হাঁড়িপাতিল খেলে , তো বোনও খেলছে সাথে আরো অনেকে । হাসুর বোন কোন কারনে অন্য কোন চাচাতো বোনের তৈরি মাটির খেলাঘরের দেওয়াল ভেংগে দিল, যা দেখেছিল হাসু । এটা নিয়ে বাড়িটিতে একটি ছোটোখাটো ঝগড়া শুরু হয়ে গেল । সবাইকে জিজ্ঞেস করছে , হাসুর ই বাবা । হাসুকে জিজ্ঞেস করতে করতে হাসু বলেই দিল সবার সামনে তার বোন করেছে। বেচারা হাসুর বাবা নীরব দর্শকের মত ভূমিকা পালন করে চলে গেল।
হাসু আস্তে আস্তে সহজ সরল গ্রামের মাঝে বড় হতে থাকে । এভাবেই হাসুর শব্দভান্ডার থেকে না শব্দটি হারিয়ে যায়। হাসুর প্রাথমিক শিক্ষা জীবনে কোন সহপাঠীদের মাঝে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হলেও একজন সহজ সরল সহপাঠীকে বন্ধুত্ব করে নেয় ।চতুর্থশেণীতে পড়াকালীন সময়ে কোন কারনে ক্লাসে অর্ন্তকোন্দল শুরু হয় । এখানে হাসু যে কোন দলে যাবে , তা বুঝে উঠতে পারেছিলো না । তাই হাসু নিরব ভূমিকা পালন করলেও কথার খুটিসুটি শুনতে না পেরে একাই দল নিই মাত্র চার জন নিয়ে , যদিও তা বাধ্য হয়েছিলাম কথার ঠোনাঠুনির জন্য , যদিও কোন এক প্রোগ্রামে স্বেচ্ছায় মিলে গিয়েছিলাম বন্ধুত্বের টানে , আমার বন্ধু নাঈমের জন্য ও হাসুর স্কুল জীবনের প্রথম বন্ধু । ক্লাস টু তে , একটা প্রশ্ন এসেছিল ” হোয়াট ইজ ইওর ফ্রেন্ড নেইম ? তার উত্তরে হাসু ওর নামটা লিখেছিল । এভাবেই নানা কারনে অকারনে প্রাথমিক জীবন কেটে যায়। তবে সেক্ষেত্রে কিছু কথা না বললেই নয়,হাসু দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকতে রাখী নামের একটা বান্ধবী প্রথম হয়েছিল , হাসু সেকেন্ড । সে হাসুর প্রথম শ্রেণীর মায়ের মত স্নেহদানকারী শিক্ষিকাকে ও জ্যাঠী বলে ডাকত । পরে শোনা গেল কিছুটা সাহায্য তার ছিল , যদি ও শিক্ষিকা হাসুকে অনেক ভালবাসত , সে হাসুকে একটু আলাদাভাবে কেয়ার করত যেমন টেবিলের পাশে বসিয়ে লেখানো, তাছাড়াওে অনেক বিষয় ছিল , হাসু ও তাকে মায়ের মত সম্মান করত ।
২য় শ্রেনিতে প্রথম হলেও ৩য় শ্রেনিতে 2য় স্থান হয় তবে তখন ১ম হয়েছিল হাসুর এক বন্ধু , পরে শোনা গেছিল, জব্বার স্যার সাহায্য করেছিল । তখন জব্বার স্যার ৪র্থ শ্রেনিতে গনিত ক্লাস নিত , সে হাসুকে ভালবাসত । একটা মজার ঘটনা , একদিন ক্লাসে স্যারে গনিত খাতা খুবই মনােযোগ সহকারে দেখতেছিল ,হাসু পাশে বসে শুধু বারবার বলতেছিল , “স্যার, এইটা হয়েছে, , ওইটা হয়েছে”। হঠ্যাৎ করে স্যার বলল, “হাসু , বেতটা নিয়ে আস” হাসু তো খুশিতে বেত নিয়ে আসল। নিয়ে আসতেই স্যার অন্যদের বাদ দিয়ে হাসুকেই মারতে শুরু করল । বলতে লাগল “মাস্টার হয়ে গেছো ,ইম , মাস্টার হয়ে গেছো । সব গনিত হলেও ও অন্যদের সব মার খেল, ঐ দিন বাকিরা বেচে গেল। হাসু কিন্তু মার খেয়েছিল ওর চালাকির জন্য , যা আগে করেছে বলেই , ঔ দিন করে ছিল । স্যারের মণ খারাপ থাকার কারনে ই হয়তো বেতের পিটুনি খেতে হয়েছে । যা হাসুকে হাসুর ভুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে ্। এভাবেই বছর শেষে বিনুর সাথে প্রতিযোগিতা করে ১ম স্থান অর্জন করে ৫ম শ্রেনীতে উত্তীর্ন হয় হাসু।
2006 সালে ৫ম শ্রেনিতে থাকাকালীন হাসুর প্রান প্রিয় প্রধান শিক্ষিকা রেবা রাণীই শিখিয়ে ছিলেন কিভাবে চালেঞ্জ নিতে হয়, দায়িত্ব কিভাবে পালন করতে হয়। তিনি হাসুকে ভালবেসে আদর করে তার বাড়িতে নিয়ে পড়িয়েছে , যার মাতৃত্ব , ভালবাসা ও আদর কখনই ভোলার নয় । তিনি ঐ স্কুলে আসার আগে হাসুর সহপাঠী ও সকল ছাত্ররা তার প্রচুর বিরোধী ছিল। কারন এর আগে রনজিৎ স্যার তাদের সকলকে ভালবেসে ছিলেন অনেক ,তাই তাকে কখনই মেনে নিতে পারি নি , তাছাড়া শুনেছিল তিনি খুবই রাগী । কিন্ত তিনি আসার পর দেখলাম তার রাগ আছে , যা থাকা অবশ্যই দরকার , যে কখনোই নিজের পরাজয় মেনে নিতে পারে নি , সর্বদা চ্যালেঞ্জ নিয়ে গেছেন সকলকে নিয়ে , পরবর্তী ছোট ভাইদের নিয়ে। একটা বিষয় না বললেই নয় ,তখন পি . এস সি পরিক্ষা ছিল না সকল ছাত্রদের মধ্যে যারা মেধাবী তারা শুধু বৃত্তি পরিক্ষা দিত । তবে সমাপণী পরিক্ষা হত , কিন্তু এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। সেই বৃত্তি পরিক্ষা মেধাবী ছাড়া কেউ দেয়ার সাহস করত না । তিনি ঐ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হয়ে আসার পর গ্রামের একটি স্কুল , যেখানে ৯০% শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে না, তাদের সকলকে ঐ পরিক্ষা দেয়ার মত চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন । তিনি এর আগে যে বিদ্যালয়ে ছিলেন , সে বিদ্যালয় , সকল থানার বিদ্যালয়ের মধ্যে সেরা হয়েছিল । তাই তার এই সাহস , নেতৃত্ব ও চ্যালেঞ্জকে অন্যরা কিভাবে নেয় , তা আমার জানা নাই , তবে হাসুর কাছে সে প্রাণপ্রিয় শিক্ষকা ।
হাসু এ দেশের সন্তান, এ দেশ আমার মাতৃভূমি ।মাঝে মাঝে দেশটা নিয়ে কেমন যেন চিন্তা এসে
যায়। ফ্রান্সে একবার অনেক ছাত্রছাত্রী ফেল করেছিল। তারাই নাকি পরবর্তীতে শাসনভারে এসেছিল আমরা এই বাংলাদেশের সেই ব্যাচ যারা প্রথম 2009 সনে সৃজনশীল কাঠামোতে অজানা অচেনা পদ্ধতি,যা শিক্ষকরাই জানে না সেই পদ্ধতিতে গনিত সহ 6টি বিষয় পরিক্ষা দিই। সরকার কাঠাল ভাঙে আমাদের দিয়ে ।2012 সন ঐ সেই ব্যাচ , যারা আবার GPA 5 ও পাশ বন্যায় নির্যাতনের শিকার হয়।আবার 2014 সাল , প্রশ্ন ফাসের ব্যাবসায়মেধাবিরা চাপা পড়ে HSC পরিক্ষায় । 2009 সনের মত 2014 সনে নতুন আইন করে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় দ্বিতীয় বার সুযোগ বন্ধ করে , তাও আবার ভর্তিপরিক্ষার একমাস শেষে ,যখন অন্য সকল ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের সময় শেষ। 2015 সাল দ্বিতীয় বার , মেডিক্যাল ভর্তির জন্য ভালভাবে লেখাপড়া শুরু করে আশায় বুক বেধে, সেই পরিক্ষাও ব্যাবসায় পরিনত করে রাগব বোয়ালরা। হআমি এক সামান্য গ্রামের ছেলে ,অনেকটা সহজ সরল মনোভাবে বড় হওয়া ।